উপ-সচিব থেকে যুগ্ম-সচিব পদে পদোন্নতি দিয়েছে সরকার। নিয়মিত ব্যাচ হিসেবে বিসিএস ২০তম ব্যাচের ১৬৬ জনসহ মোট ২২২ কর্মকর্তা এ পদোন্নতি পেয়েছেন। বাকি কর্মকর্তারা আগের বঞ্চিত ও অন্যান্য ক্যাডারের।
আজ শুক্রবার এ সংক্রান্ত দুটি প্রজ্ঞাপনে ২১৩ জনের নাম প্রকাশ করেছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। এদের মধ্যে ২০৩ জন বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, বিভাগ ও অন্যান্য সরকারি দফতরে কর্মরত আছেন। ১০ জন বিদেশে বাংলাদেশ দূতাবাস ও হাইকমিশনে কর্মরত। বাকি ৯ জন লিয়েনে থাকায় তারা ফিরলে প্রজ্ঞাপন জারি করা হবে।
পদোন্নতিপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের যোগদানপত্র ই-মেইলে (sal@mopa.gov.bd) পাঠাতে বলা হয়েছে। পদোন্নতি পাওয়া কর্মকর্তাদের বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওএসডি) করা হলেও পদায়ন করা হয়নি। শিগগিরই বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগে ইন-সিটু (আগের পদে রাখা) করা হবে। ফলে তাদের আগের পদেই কাজ করে যেতে হবে। এ পদোন্নতির ফলে সরকারের যুগ্ম-সচিবের সংখ্যা দাঁড়াল ৮১২ জনে। অথচ অনুমোদিত পদের সংখ্যা মাত্র ৩৩০। অর্থাৎ যুগ্ম-সচিবের পদের চেয়ে দ্বিগুনেরও বেশি কর্মকর্তা হলো প্রশাসনে।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলেছেন, স্থায়ী পদ না থাকায় এমনিতেই অনেক যুগ্ম-সচিবকে নিচের পদে কাজ করতে হচ্ছে, তার ওপর নতুন করে পদোন্নতি দেওয়া হলো। পদোন্নতিপ্রাপ্ত বেশিরভাগ যুগ্ম-সচিবকে বর্তমান কর্মস্থলে ইনসিটু (উপ-সচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করা স্থানে) থাকতে হবে। পদের চেয়ে বেশি কর্মকর্তা হওয়ায় পদোন্নতি পাওয়া কর্মকর্তাদের বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগে ইন-সিটু (আগের পদে রাখা) করা হবে। অর্থাৎ এসব কর্মকর্তাকে আগের পদেই কাজ করতে হবে। ফলে পদোন্নতি পাওয়ার পরও তারা নতুন ডেস্ক পাচ্ছেন না সেটা প্রায় নিশ্চিত। অতীতেও পদোন্নতির পর পদের চেয়ে কর্মকর্তা বেশি হওয়ায় আগের পদেই কাজ করতে হয়েছে। এবারও এর ব্যতিক্রম হবে না।
পদোন্নতির প্রজ্ঞাপন পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, এবারে পদোন্নতিতে নিয়মিত ব্যাচ ধরা হয়েছে ২০তম ব্যাচ। এ ব্যাচের পদোন্নতিযোগ্য কর্মকর্তার সংখ্যা ২৪৮ জন থাকলেও পেয়েছেন ১৬৬ জন। এর আগে পদোন্নতি না পাওয়া লেফটআউট কর্মকর্তার সংখ্যা প্রায় একশ হলেও তাদের মধ্য থেকে মাত্র ৭ জনকে বিবেচনায় নেওয়া হয়েছে। এছাড়া অন্যান্য ক্যাডারের ৩০ জন কর্মকর্তা এ যাত্রায় পদোন্নতি পেয়েছেন। ফলে পদোন্নতির সুপারিশকারী কর্তৃপক্ষ ‘সুপিরিয়র সিলেকশন বোর্ড’ (এসএসবি) যুগ্ম-সচিব পদে পদোন্নতি দিতে প্রায় ৬০০ কর্মকর্তার তথ্য যাচাই-বাছাই করেছিল। অর্থাৎ যোগ্যতা থাকার পরও এসব কর্মকর্তাকে আগের পদেই কাজ করে যেতে হবে।
প্রায় ৬০০ কর্মকর্তা পদোন্নতির যোগ্য হলেও ২২২ জনকে পদোন্নতি দেওয়ায় অনেকেই বঞ্চিত হয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। ‘সরকারের উপ-সচিব, যুগ্ম-সচিব, অতিরিক্ত সচিব ও সচিব পদে পদোন্নতি বিধিমালা, ২০০২’-এ বলা হয়েছে, যুগ্ম-সচিব পদে পদোন্নতির ক্ষেত্রে ৭০ শতাংশ প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তাদের ও ৩০ শতাংশ অন্যান্য ক্যাডারের উপ-সচিব পদে কর্মরতদের বিবেচনায় নিতে হবে।
বিধিমালা অনুযায়ী, উপ-সচিব পদে কমপক্ষে পাঁচ বছর চাকরিসহ সংশ্লিষ্ট ক্যাডারের সদস্য হিসেবে কমপক্ষে ১৫ বছরের চাকরির অভিজ্ঞতা বা উপ-সচিব পদে কমপক্ষে তিন বছর চাকরিসহ ২০ বছরের অভিজ্ঞতা থাকলে কোনো কর্মকর্তা যুগ্ম-সচিব পদে পদোন্নতির জন্য বিবেচিত হন।
যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও কেন সবাইকে পদোন্নতি দেওয়া হয় না- এমন প্রশ্নের জবাবে জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন বলেছেন, ‘প্রশাসনের পিরামিড ঠিক রাখতে আমাদের পদোন্নতির বিষয়ে সংকোচন নীতি নিতে হচ্ছে। যেখানে জনবল কাঠামোর আকৃতি পিরামিডের মতো হওয়ার কথা, সেখানে মটকার মতো পেট মোটা হয়ে গেছে। তাই গত বছর থেকে পদোন্নতির সংখ্যা কমানো হয়েছে। হয়তো আরও কিছু সময় লাগবে।’
তবে নাম প্রকাশ না করা শর্তে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের একাধিক কর্মকর্তা জানান, যাদের পদোন্নতি হয়নি তাদের অনেকের বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা রয়েছে। কারও কারও নানা ধরনের অসংগতিও রয়েছে। এমনকি অনেকের বিরুদ্ধে মাঠে কাজ করার সময় অসদাচরণের অভিযোগও রয়েছে। এসব কারণে অনেকের পদোন্নতি হয়নি।